সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: জামায়াতের সঙ্গে প্রায় দুই যুগ ধরে জোটবদ্ধ বিএনপি। ১৯৯৯ সালের গঠিত চারদলীয় জোটের মাধ্যমে শুরু হয় পথ চলা। বর্তমানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ। দীর্ঘদিনের জোট সঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে জোট রাখা না-রাখা নিয়ে আগেও অনেকবার আলোচনা হয়েছে। নতুন করে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বৃহত্তর জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে। জোটের লক্ষ্য হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার। এ জোট গঠন কেন্দ্র করে জামায়াত ইস্যূ নতুন করে আবার সামনে চলে এসেছে। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট রাখা না-রাখা নিয়ে জোর আলাপ-আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও জোর আলোচনা চলছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। তবে একটা সিদ্ধান্তে আসতে চায়, এ জন্য নিজ দলের পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মতামত নেয়া শুরু করেছে বিএনপির হাই কমান্ড।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিকাল চারটায় ২০ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় পার্টি (জাফর) ও ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা। বৈঠকে নানা বিষয়ে আলোচনা হলেও গুরুত্ব পায় জামায়াত ইস্যূ। জামায়াতে সঙ্গে জোট রাখা না-রাখা নিয়ে বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে বৈঠকে উপস্থিত নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জামাত ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে আলোচনা চলছে। এবার একটি সিদ্ধান্ত আসার পক্ষে সবাই মতামত দিয়েছে। এজন্য শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। কী সিদ্ধান্ত আসতে পারে? এমন প্রশ্ন করা হলে সূত্র জানায়, সে ব্যাপারে এখনো কোনো কথা বলা যাচ্ছে না। যে কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা এ বিষয়টিতে এবার একটা সিদ্ধান্ত আসবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোট রাখা না-রাখার ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না৷ যখন যা বলার দরকার হয়, তখন দলের পক্ষ থেকে বলা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি সূত্র জানান, নাইন-ইলেভেনের পর বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণ পাল্টে গেছে। তখন থেকে ইসলামী ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কোনঠাসা। বাংলাদেশেও এর ঢেউ পড়েছে। ধর্মভিত্তিক দল হওয়ায় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জামায়াতের রাজনীতিও কোনঠাসা। আর জামায়তে সঙ্গে জোট থাকার কারণে এসব মহলের সঙ্গে দুরত্ব বেড়ে চলেছে বিএনপির। আন্তজার্তিক মহলে এখন নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চায় রাজপথের প্রধান বিরোধী দল। সে অনুযায়ী তৎপরতাও চালিয়ে যাচ্ছে। আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে দেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর পাশে চায় দলটি। এ প্রচেষ্টার পথে বাধা সৃষ্টি করছে জামায়াতের সঙ্গে জোট। এই বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছে।
বিএনপির আরেকটি সূত্র জানান, জামায়াত খুবই চতুর। বিএনপির দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারি নেতাদের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক নেই। যোগাযোগও তেমন নেই। এসব নেতাদের নিয়ে বিষাদগার করে জামায়াত। বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদের অনেকেই জামায়াতের সঙ্গে জোট চায় না। কিন্তু বিএনপির হাই কমান্ডের সঙ্গে স্টংলি যোগাযোগ মেইনটেইন করে চলে তারা। বিশেষ ম্যাডাম তাদের প্রতি আন্তরিক। ম্যাডাম দীর্ঘদিন রাজনীতির বাইরে রয়েছেন। এখন দল পরিচালনা করছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক কেমন তা এখনো বোঝা যায়নি। দল ও জোটের অন্যান্য দলের মতামত বোঝার চেষ্টা করছে তারেক রহমান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বৃহত্তর ঐক্যের জন্য কাজ করছি। প্রক্রিয়াটা এখনো প্রাথমকি পর্যায়ে রয়েছে। জামায়তের সাথে বিএনপির সম্পর্কটা কেমন হবে; তা এখনই কিছু বলা যাবে না। কাজটা শেষ করি তখন জানতে পারবেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে জামায়াত থাকলেও সর্বেশেষ কয়েক বছরে দলটির সঙ্গে দুরত্ব বেড়েছে বিএনপির। জোটের কোনো কার্যক্রম নেই তারা। যৌথভাবে কোনো কর্মসূচিও আসেনি আর বিএনপির কোনো কর্মসূচিও জামায়াতকে পানলন করতে দেখা যায়নি।
আইআর/১২ ফেব্রুয়ারি